অবশষ জলশয় উনমকত শতধক জল পরবর সবসত
সোমবার (৩ জুলাই) দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত ঘটনাস্থলে পৌঁছে বাঁধটি অপসারণ করা হয়। অবৈধ ভাবে মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ দেয়ার অপরাধে দখলদার কিলন মিয়াকে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন আদালত। দীর্ঘদিন পর জেলে সম্প্রদায়ের স্বপ্নের জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ায় খুশির যেন সীমা নেই তাদের।
এলাকাবাসী জানায়, বর্ষার শুরুতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুহিলপুর ইউনিয়নের সিতানগর গ্রামের কাজলাবিলের উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ করেন প্রভাবশালী একটি মহল। এতে মুক্ত জলাশয়ে মাছ শিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন সিতানগর ও কাশিনগর গ্রামের শতাধিক জেলে পরিবার। বেঁচে থাকার তাগিতে উপায়ন্তু না পেয়ে গ্রামবাসী জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ার জন্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে জলাশয়টি উন্মুক্ত করার জন্যে দখলদার কিলন মিয়া ও গৌর সাহাকে একাধিক নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু একাধিক নোটিশ পেলেও জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দেয়নি দখলদাররা। পরে সোমবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দখলের অভিযোগে দখলদার কিলন মিয়াকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এতে খুশি গ্রামের সাধারণ প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেরা।
গ্রামের বাসিন্দা তপন দাস জানান, ‘বর্ষাকালে আমাদের গ্রামের মানুষের কোনো কাজ কাম থাকে না। আমরা এই বিলের ওপর নির্ভরশীল। দখলদারেরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা এতদিন বিলের কাছে যেতে পারিনি। আজ এই বিলের বাঁধ উন্মুক্ত করে দেয়ায় আমরা বেশ খুশি। এখন আমরা এই বিলে মাছ ধরতে পারবো। পরিবার নিয়ে বাঁচতে পারবো।
আরও পড়ুন: জলাশয় রক্ষায় বরিশালে গণশুনানি
গ্রামের অপর বাসিন্দা মিন্টু দাস জানান, ‘গৌর সাহা প্রভাবশালী তার সঙ্গে শহরের কান্দিপাড়া এলাকার মাইমলরা যোগ দিয়েছে। এতে আমরা জলাশয়ে নামতে না পেরে অসহায় হয়ে পড়েছি। পরিবার নিয়ে কিভাবে বাঁচবো দুঃচিন্তায় ছিলাম। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আমাদের ডাক শুনেছেন। সোমবার এসিল্যান্ড স্যার এসে জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দিয়ে গেছেন। আমরা এখন মাছ ধরতে পারবো। এতে অনেক খুশি আমরা।’
গ্রামের জনপ্রতিনিধি সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদ এর ৯নং ওয়ার্ড মেম্বার নিশিকান্ত ঋষি জানান, গ্রামের শতাধিক পরিবার এই বিলের সঙ্গে জড়িত। প্রভাবশালী গৌর সাহা এবং কিলন মিয়া গংরা এই বিলের মধ্য বাঁধ নির্মাণ করেন। এতে এলাকার জেলে সম্প্রদায়ের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছিল। তারা এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদন নিবেদন করেছে। পরে আজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মধ্য দিয়ে জলাশয়টি উন্মুক্ত করা হয়। এতে গ্রামের সাধারণ মানুষ অনেকটাই উপকৃত হবে বলে জানান ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নীশি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান জানান, ‘এই অবৈধ বাঁধটি দেয়ার কারণে দেশীয় মাছ বিচরণ এবং সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অনেকটাই বাঁধা ছিল। পাশাপাশি এই জলাশয়ের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন অনেক জেলে পরিবার। দখলদাররা প্রশাসনের নির্দেশনা না মানায় সোমবার অভিযানের মাধ্যমে বাঁধটি অপসারণের মাধ্যমে জলাশয়টি উন্মুক্ত করা হয়। এতে গ্রামের জেলে পরিবারগুলো উপকৃত হবে।
অভিযানে দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার ভূমি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোশারফ হোসেন জানান, ‘দখলদাররা জলাশয় দখলের বিষয়টি স্বীকার করায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ এর আলোকে দোষ স্বীকার করায় দখলদার কিলন মিয়াকে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এখন থেকে জেলেরা উন্মুক্ত ভাবে জলাশয় থেকে মাছ স্বীকার করতে পারবে। সোমবার থেকে আর কোনো বাঁধা থাকলো না।
জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ায় প্রশাসনের অভিযানকে সাধুবাদ জানান নদীভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘তরী’ বাংলাদেশ এর সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি জানান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আইন করেছিলেন জ্বাল যার জলাতার। এই আইন যেন হাওড় নদী জলাশয়ের ক্ষেত্রেই বজায় থাকে।
জলাশয়টি উন্মুক্ত করে দেয়ার ফলে শতাধিক জেলে পরিবারের পাঁচ শতাধিক খেটে খাওয়া মানুষ উপকৃত হবে বলে জানান গ্রামের জনপ্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টরা।
from somoynews.tv | RSS Feed https://ift.tt/qgoa9h0
via IFTTT
Comments
Post a Comment