পদম সতর এক বছর: মল বনদর দয় সড়ক পথ বড়ছ আমদন-রফতন
বলা যায়, রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণের মেলবন্ধন তৈরি হওয়ার পুরো সুফল পাচ্ছে মোংলা বন্দর তথা পুরো দক্ষিণাঞ্চলবাসী। বন্দরের কর্মচঞ্চল বেড়ে যাওয়ার ফলে বন্দরে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন হওয়ায় অপারেশনাল কার্যক্রম সহজীকরণের মাধ্যমে এ বন্দরে একদিকে যেমন জাহাজ আগমন বেড়েছে তেমনি আমদানি-রফতানিও বেড়েছে। মোংলা বন্দরকে আমদানি নির্ভর বন্দর বলা হলেও পদ্মা সেতু চালুর পর এ বন্দর দিয়ে বিদেশে পণ্য রফতানি বেড়েছে। দেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাক এখন মোংলা বন্দর দিয়েই রফতানি হচ্ছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা অত্যাধুনিক মাল্টিপারপাস ক্রেনের সহায়তায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৪০০টি কন্টেইনার খালাস করা সম্ভব হচ্ছে।
মোংলা বন্দরের উপ-সচিব মো. মাকরুজ্জামান জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মোংলা বন্দরে কন্টেইনারবাহী জাহাজ আগের তুলনায় বেশি আসছে। দেশের বিভিন্ন জায়গার গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত তৈরি পোশাক এ বন্দর দিয়ে রফতানি হওয়ার কারণে এক বছরে ১৫ শতাংশ রফতানি বেড়েছে, পর্যায়ক্রমে আরও বাড়বে।
বন্দরের এই কর্মকর্তা আরও জানান, মোংলা বন্দর দিয়ে ইউরোপের পোল্যান্ড, জার্মানি এবং ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশে পোশাক রফতানি করা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে মোংলার দূরত্ব কম হওয়ায় স্বল্প সময়ে কম খরচে পণ্য রফতানির জন্য গার্মেন্টসের উদ্যোক্তারা এখন এ বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের আশা আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই রফতানির হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাবে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অধিকাংশ জেলায় অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিমায়িত মৎস্য ও পাট শিল্পের স্থান রয়েছে। পদ্মা সেতুর কারণে এ খাতে রফতানি আয় আরও বেড়েছে। পাশাপাশি মোংলা রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের সঙ্গে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক সহজ হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কাঁচামাল আগে যেখানে জাহাজে আসত, সেখানে এখন সড়ক পথে আসছে। এতে মোংলা এই ইপিজেডে বিনিয়োগও বাড়তে শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু /ঘুরে দাঁড়িয়েছে মোংলা-বেনাপোল বন্দর
মোংলা সমুদ্র বন্দরের পর তৃতীয় সমুদ্র বন্দর হচ্ছে পায়রা। এখন পদ্মা সেতুর কারণে এই বন্দরের উন্নয়ন অনেক বেগবান হবে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এখানে বাড়াবে। বন্দরকে কেন্দ্র করে আশপাশের এলাকা শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে উঠবে। পদ্মা সেতু হওয়ায় পায়রা বন্দরের সঙ্গেও সারা দেশের সড়ক যোগাযোগটা স্থাপিত হয়েছে। শুধু সারা দেশই নয়, বহির্বিশ্বের সঙ্গেও যোগাযোগ তৈরি হয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সংযুক্ত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যারা আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত তারা এখন আগ্রহী হয়ে উঠবে পায়রা ও মোংলা বন্দরকে ব্যবহার করার জন্য। এখন তাদের মালামাল ঢাকা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যে কোনো প্রান্তে পাঠাতে আর কোনো সমস্যা থাকছে না।
এ ছাড়া ঢাকার সঙ্গে বেনাপোলের দূরত্বও কমেছে ৯৩ কিলোমিটার। ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বড় অংশই হয় এ সড়ক পথে। যা থেকে আদায়ের রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। এ পথে যাতায়াতে সময় বাঁচবে তিন থেকে চার ঘণ্টা। সঙ্গে কমবে পরিবহন খরচও। তাই বাণিজ্য বৃদ্ধির সঙ্গে স্থলবন্দরটির রাজস্ব দেড় গুণ হবে বলে ধারণা করছে ব্যবসায়ীরা।
দেশে আটটি রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) ও একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু আছে। এর মধ্যে পদ্মার ওপারে শুধু মোংলা ইপিজেড। পদ্মা সেতুকে ঘিরে যশোর ও পটুয়াখালীতে আরও দুটি ইপিজেড করার প্রস্তাব আছে। এতে এ অঞ্চলে রফিতানিমুখী খাতে আরও বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। এর ফলে বাড়ছে কর্মসংস্থান।
আরও পড়ুন: পদ্মা সেতু পাল্টে দিয়েছে বরিশালের অর্থনীতির গতিপথ
বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি প্রতিবছরই ১৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ বন্দর দিয়ে মোট গাড়ি আমদানি করা হয়েছে ২১ হাজার ৪৮৪টি অর্থাৎ আমদানি করা মোট গাড়ির ৬০ শতাংশ এ বন্দর দিয়ে খালাস করা হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করায় গাড়ি আমদানি বেড়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়ি সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছানো সহজ হয়েছে।
উন্নত হিন্টারল্যান্ড যোগাযোগ ও অবকাঠামো সমতার সুযোগে পণ্য আমদানি-রফতানিতে মোংলা বন্দরের ওপর নির্ভরতা দ্রুত বাড়ছে ব্যবহারকারীদের। ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটান নিয়মিত এ বন্দর ব্যবহার শুরু করলে বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বাড়বে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করলে নেপাল ও ভুটানেরও বৈদেশিক বাণিজ্য সাশ্রয় হবে। এতে রাজস্ব আয় বাড়বে বাংলাদেশের।
from somoynews.tv | RSS Feed https://ift.tt/EzPZJaw
via IFTTT
Comments
Post a Comment